দিন আসে,দিন যায় । ভালো দিন থাকেনা চিরকাল । দুঃখের দিনও থাকেনা ।দেখতে দেখতে বয়স বাড়ে,আয়ু কমে এবং ফুরিয়ে যায় দিন । এসবই তো চলেছে,চলছে,চলবেই । কিন্তু আমাদের আসল কাজ যে এখনো বাকি ।জীবনে কি করতে এসেছি ? আর কি করে দিন কাটিয়ে দিচ্ছি ? শেষ খেয়ার ডাক যখন আসবে তখন হাতে থাকবে তো শেষ পারানির কড়ি ? বেলা যে বয়ে যায়।পথিক,খেয়াল আছে কি? - : তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
সকলে যেন সুখী হোক, সকলে নিরাময় লাভ করুক, কেউ যেন কোথাও দুঃখভোগ না করে ।
গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন - 'সর্বধর্মান পরিত্যাজ্য মামেকং শরণং ব্রজ'। অর্থাত সব ধর্ম ত্যাগ করে আমার ভজনা কর। যুদ্ধের আগে অর্জুনের মনে ভয় ছিল যে যুদ্ধ করলে আত্মীয় বধের পাপ স্পর্শ করবে। তাই ভগবান তাকে বলেন - 'ধর্মাধর্ম নিয়ে তুমি ভাবছ কেন? কার কি ধর্ম সেসব নিরুপনের ভার আমার উপর ছেড়ে দাও,আমার শরণ নাও। আর তারপর নিশ্চিন্তে যুদ্ধ কর। কারণ যুদ্ধ ক্ষত্রিয়ের ধর্ম। এটাই হল যথার্থ শরণাগতি। সকাল ধর্মাধর্ম ঠাকুরের পায়ে সঁপে দিয়ে শরণাগত হওয়া আর তারপর নিজের কাজ করে যাওয়া। তবেই তো ঠাকুর এসে ধরবেন জীবনরথের রাশ।
প্রশ্ন উঠতে পারে - এই শরনাগতির বৈশিষ্ট কি? এবার সেই আলোচনায় আসা যাক।
শরনাগতির প্রথম বৈশিষ্ট হলো মনে নিশ্চিন্তভাব আনা। ভক্ত যখন তাঁর সমস্ত কিছুর সাথে নিজেকেও ঠাকুরের পায়ে সমর্পণ করেন তখন তাঁর মনে নিজের জাগতিক বা পারলৌকিক কল্যানের চিন্তাও আসে না। তিনি ভাবেন না - কি খাব, কোথায় থাকব,কিভাবে আমার দিন কাটবে? যতক্ষণ না নিজের আমিত্বের ভাব কাটছে ততক্ষণ এই অবস্থা আসেনা। তাই ভক্তের চেষ্টা করতে হয় - মন,বুদ্ধি,ইন্দ্রিয় বা দেহ এসবে যেন 'আমার'ভাব ঢুকতে না পারে। আর তাকে ভাবতে হবে - যে আমি আসল আমি নই সেই আমিকে নিয়ে কেন ভাবব? ঠাকুর নিজেই তো বলেছেন গীতায় ' মা শুচঃ', অর্থাত চিন্তা কোর না। তাই চিন্তা করা মানে শরনাগতির অপমান। ভক্তকে ভাবতে হবে - আমার সবকিছুই ঠাকুরের আর আমিও তাঁর। তাই আমার কোন চিন্তাই থাকতে পারে না। যে ভক্ত শরণাগতি নিয়েও চিন্তা করে ঠাকুর তাঁর তল্পি বইতে আসেন না কিন্তু যে শরণাগত ভক্ত নিজের সবকিছু ঠাকুরকে সমর্পণ করে নিষ্কাম হয়ে কর্ম করেন ঠাকুর একমাত্র তাঁর পাশেই এসে দাঁড়ান পরমানন্দে। -
ঈশ্বর আলোর সমুদ্র।তাকে পাবার উপায় একটাই - নিজের আলোর স্বরুপকে জাগানো। সেই লক্ষ্যেই আমার এবং আমার শরণাগত সম্প্রদায়ের পথ চলা। আমার সম্প্রদায়ে যেমন কারো আবাহন নেই,তেমন বিসর্জনও নেই কারো।যাকে ঠাকুর টানবেন তাকেই পাব কাছে জানি যে। তবে এখানে আমার কোন কৃতিত্ব নেই। কারোর থেকে নিজে আমি এগিয়ে আছি তাও মনে করি না। আমি মনে করি - যে ভক্তির রস আস্বাদ করিয়েছেন ঠাকুর সেই স্বাদ ভাগ করে নিই আমার সেইসব শরণাগত ভাইবোনদের সাথে যারা তাঁকে ভালবাসে নিষ্কামভাবে ,যারা তাঁর প্রতি শরনাগতি রেখে জীবনে চলে। তার জন্যেই আমার এত বই লেখা এবং ভক্ত শিষ্যদের হাত ধরে সেই আস্বাদের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া। সেজন্যেই তাদের ধ্যান জপ ক্রিয়ায় সমৃদ্ধ করার প্রয়াস - যে পথে সেই নিজের স্বরূপে খুঁজে পাওয়া যায় নিজেকে। তবে এসবেই আমি ঠাকুরের মাধ্যম মাত্র - আমার নিজস্ব কোন পৃথক সত্বা নেই। তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায় বা শরণাগত সম্প্রদায় কোন miracle দেখায় না।
ভালো থাকবেন ..
শুভেচ্ছাসহ
[ সভাপতি শরণাগত সম্প্রদায় ] তারাশিস গঙ্গোপাধ্যায়
প্রশ্ন- জীবনে এত না পাওয়ার মধ্যে ভালো থাকার পথ কি ?
জীবনের সব চেয়ে বড় প্রয়োজন সব অবস্থায় নিস্পৃহ নির্লিপ্ত থাকা।ঠাকুর যা দিচ্ছেন তাতেই সন্তুষ্ট থাকা।কারণ যা আমরা পাওয়ার যোগ্য তা আমরা পাবই।তাই সব ঠাকুরের উপরে ছেড়ে দেয়া ভাল।একমাত্র এভাবেই শরনাগতি জাগানো যায়।কিছুই চাইবেনা।এমনকি ঠাকুরকেও না পাওয়ার জন্য অস্থির হবে না। শুধু সাধনা করে যাও।জপ বাড়াও।যোগ্যতা অর্জন কর। তাতে ঠাকুর নিজেই চলে আসবেন তোমার কাছে। চেয়ে কি লাভ? যখন সময় হবে তিনি নিজেই আর দূরে থাকতে পারবেন না।আর যতক্ষন সময় না হবে ততক্ষণ তিনি আসতেই পারবেন না।তাই আমাদের কাজ হবে নিজের কাজ ঠিকমত করে যাওয়া ।জপ ধ্যান সাধনা ঠিকমত করে গেলে সব পাবে। যেথায় চাওয়া সেথায় হারানো।যেথায় চাওয়া নেই,সেথায় শুধুই পাওয়া আর শান্তি।
এই সম্প্রদায় হল সর্ব ধর্ম সমন্বয়ের সম্প্রদায়। সব ধর্মের মাধুইকে সঙ্গে নিয়ে মানবসেবার কাজে নামার জন্যে এই সম্প্রদায়ের সৃষ্টি। এই সম্প্রদায় মানুষকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সর্বধর্মের মূল সুত্র শরনাগতির দিকে। তাই তো এর নাম শরণাগত সম্প্রদায়।